শিক্ষাক্ষেত্রে যোগের ভূমিকা
প্রাচীন ভারতবর্ষে আজ থেকে ছয়/সাত হাজার বছর আগে এদেশের মুনিঋষিরা যোগশাস্ত্রের উদ্ভাবন করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল একই সঙ্গে দেহমনকে পরিশুদ্ধ করা। তাই প্রাচীন যুগে ঋষিদের তপোবনে শিষ্যদের যোগশাস্ত্র শিক্ষা দিতেন গুরুরা, যাতে তারা ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে।
অষ্টাঙ্গযোগের প্রথম দুটি ধাপ য়ম, নিয়ম-এর নির্দেশিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব রকম খারাপ অভ্যাস ও আচরণ ত্যাগ করে শুচিতার অনুশীলন করতে হয়। এরপর আসন, মুদ্রা ও প্রাণায়ামের মাধ্যমে দেহ-মনকে পরিশুদ্ধ করে সবরকম ক্ষতিকর কামনা-বাসনা থেকে মনকে মুক্ত করা
সম্ভব। যোগের মাধ্যমে দেহের গ্রন্থিগুলির কাজ যথাযথ হওয়ায় দৈহিক ও মানসিক বিকাশ যথাযথ হয়। যোগের শিথিলকারী প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে মন শান্ত হয়, বর্তমানের উত্তেজনাপ্রবন জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে মনকে শান্ত ও সংযত রাখতে যৌগিক প্রক্রিয়া অত্যন্ত কার্যকর। পরীক্ষামূলকভাবে দেখা গেছে যে কয়েদীদের দীর্ঘদিন যোগ অনুশীলন করানোর পর তাদের আমূল মানসিক পরিবর্তন করা যায়। সাধারণ পড়াশোনার মধ্যে আমরা যদি আধ্যাত্মিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে পারি তবে তা পরিপূর্ণতা প্রাপ্ত হবে। মানুষের মনের গঠন প্রস্তুত হয় তার শৈশবে। প্রবাদ আছে লোহা যখন উত্তপ্ত থাকে সেই সময় তাকে ঢালাই করতে হয়। তাই শৈশবের শিক্ষার সঙ্গেই যোগশিক্ষাকে যুক্ত করা উচিত। বর্তমানে বিদেশে অনেক জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে যোগশিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাতে খুব ভাল ফল পাওয়া গেছে।
পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যালয়স্তর থেকেই যোগ শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এইভাবে স্কুল-কলেজ এমনকি Primary School-এ এর প্রচলন করা দরকার। কারণ শৈশব অবস্থা থেকে দেহমনকে সঠিকভাবে গঠন করার জন্য কম কষ্টসাধ্য এবং কম ব্যয়সাপেক্ষ আর কোন প্রক্রিয়া নেই। কারণ এতে কোনও যন্ত্রপাতি লাগে না। অল্প জায়গায় অনুশীলন করা সম্ভব। এতে শরীরকে কোনও অস্বাভাবিক ধকল সইতে হয় না, এবং বিশেষ বিশেষ খাদ্য খাওয়ার প্রয়োজন হয় না, ছেলেমেয়ে উভয়েই সমান ভাবে করতে পারে। দেহমন একসঙ্গে পরিশুদ্ধ করা সম্ভব বলে প্রাশ্চাত্য দেশেও এর কদর খুব বেশী। যোগ শিক্ষাকে ব্যাপকভাবে সাধারণ শিক্ষার অঙ্গীভূত করা বাঞ্ছনীয়।