শরীরকে নীরোগ রাখতে যোগাসনের ভূমিকা

শরীরকে নীরোগ রাখতে যোগাসনের ভূমিকা

‘শরীরমাদ্যং খলু ধর্ম সাধনম্’। অর্থাৎ আগে শরীরের সুস্থতা পরে ধর্মকর্ম। দেহ যদি হয় রোগগ্রস্থ কোনও কাজেই মন লাগে না। প্রাচীনকালে মুনিঋষিরা একথা উপলব্ধি করেছিলেন মনে প্রাণে। তাই, তাঁরা শরীর ও মনকে নীরোগ রাখতে যৌগিক প্রক্রিয়ার উদ্ভাবন করেছিলেন।

নিরাময়ের পূর্ব পর্য্যায় প্রতিরোধ। Prevention is better than cure— এই আপ্ত বাক্যটি আমরা সকলেই জানি। কিন্তু, পশ্চিমের উন্নত দেশের মানুষরা বর্তমানে যতখানি শরীর সচেতন আমরা ততখানি নই। তাই, দেখা যায় ভারতীয় যৌগিক পদ্ধতি বিদেশে বিশেষ করে পাশ্চাত্ত্য দেশগুলিতে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছে।

যৌগিক প্রক্রিয়ার বিশেষজ্ঞ হল, এতে দেহের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ গুলির কাজ উদ্দীপিত এবং সুনিয়ন্ত্রিত হয়। যোগাসনের দ্বারা Venous return বা রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায় বলে দেহের সমস্ত কোষগুলির মধ্যে অক্সিজেন এবং পুষ্টি পদার্থের যোগান সঠিকভাবে হয়। এতে, জীবনীশক্তি বৃদ্ধি পায় । যার আমাদের শরীরে যে স্বাভাবিক Defensive mechanism বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে তা সহজে কার্য্যকর হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আছে—শ্বেত কণিকা, লসিকা, বিভিন্ন গ্রন্থি ইত্যাদি। এছাড়া আছে অ্যান্টিবডি প্রস্তুত প্রণালী। এগুলির সঠিক কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজন সতেজ জীবনীশক্তি, সঠিক রক্ত সঞ্চালন এবং স্বাভাবিক শারীরিক কার্য্যকলাপ। আভ্যন্তরীণ যন্ত্রগুলির গোলযোগ দেখা দিলে জীবনীশক্তি কমে আসে এবং রোগ প্রতিরোধের দেওয়ালগুলিও কমজোর হয়ে পড়ে। প্রতিরোধ দুর্গ ভেদ করে নানা রোগের জীবাণু ঢুকে পড়ে এবং প্রহরীদের পরাজিত করে দেহের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। তাই, নীরোগ শরীর

গড়তে হলে প্রথমেই প্রতিরোধ দুর্গটিকে যথাসাধ্য মজবুত করে গড়ে

তুলতে হবে। একাজে যৌগিক প্রক্রিয়া যে কতখানি কার্য্যকর তা বিশ্বের .. বিজ্ঞানী মহলেও বহুল স্বীকৃত। এবারে আসা যাক আমাদের দেহে যে সব বিভিন্ন তন্ত্র (System) আছে

সেগুলি সম্বন্ধে।

Skeletal system অর্থাৎ হাড়, পেশী ও সন্ধিগুলির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অস্টিও আর্থরাইটিস, রিউমেটয়েড আর্থরাইটিস, স্পন্ডিলোসিস, অস্টিওপোরোসিস্ ইত্যাদি রোগ আক্রমণ করতে পারে। তাই, এই রোগগুলির প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য বৃক্ষাসন, উৎকটাসন, উত্থিত পদ্মাসন, ভূমি সমান্তরাল আসন, বীরভদ্রাসন প্রভৃতি করা যেতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন আসনের মাধ্যমে বেশী বয়সেও দেহকে নমনীয় রাখা সম্ভব।

রক্ত সংবহন তন্ত্র বা Cardio vascular system-এর মধ্যে আছে হৃৎপিন্ড, ধমনী, শিরা, কৈশিক নালী ইত্যাদি। আজকাল ঘরে ঘরে হার্টের অসুখের কথা শোনা যায়। এছাড়া শিরা এবং ধমনীরও নানা রোগ হতে পারে। যেমন, Varicose Veins, Arterio sclerosis ইত্যাদি। এসব রোগের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে যোগাসন, বিভিন্ন ব্যায়াম, ভ্রমণ ইত্যাদির মাধ্যমে দেহটাকে সচল রাখতে হবে। হৃৎপিন্ডকে শক্তিশালী করা যায় এমন আসন ও প্রাণায়াম নিয়মিত অভ্যাস করা ভাল। এবিষয়ে ব্যক্তিভেদে বিশেষজ্ঞরা বিশেষ বিশেষ আসন নির্দেশ করে থাকেন।

হজমতন্ত্রে (Digestive system) যদি গোলমাল দেখা দেয় তবে সমস্ত শরীরেই অস্বস্তি দেখা দেয়। কোনও কাজেই মন লাগে না। তাই পবন- মুক্তাসন, ভূজঙ্গাসন, যোগমুদ্রা, অগ্নিসার ধৌতি, অর্ধকূর্মাসন, হলাসন, উড্ডীয়ান প্রভৃতি অনুশীলন করে হজম যন্ত্রগুলিকে শক্তিশালী করা নিশ্চয় লাভজনক।

Respiratory system বা শ্বাসতন্ত্রের মধ্যে প্রধান ভূমিকা হল ফুসফুসের।

এর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে হাঁপানী, ব্রঙ্কাইটিস, প্লুরিসি, টিউবারকুলোসিস্ ইত্যাদি নানা রোগ আসতে পারে। যোগশাস্ত্রে বর্ণিত বিভিন্ন প্রাণায়ামের মাধ্যমে ফুসফুসকে শক্তিশালী করা যায়। যেমন, ভস্ত্রিকা, কপালভাতি, সূর্য্যভেদ, শীতলী, কুম্ভক প্রভৃতি।

বর্তমান যুগে আমাদের জানা আছে পিটুইটারী, থাইরয়েড, অ্যাড্রিনাল এইসব গ্রন্থি সামগ্রিকভাবে শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। প্রাচীনকালের মুনিঋষিরাও গ্রন্থিগুলি সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান রাখতেন । তাঁরা গ্রন্থিগুলির নামকরণ করেছিলেন— শিবসতী, ইন্দ্রগ্রন্থি, উপেন্দ্রগ্রন্থি ইত্যাদি। এই গ্রন্থিগুলির উন্নতিবিধান করতে যোগাসন অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে। যেমন, আজকাল দেখা যাচ্ছে যে, থাইরয়েডের গোলমালের কারণে অগণিত মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। এইসব রোগী থাইরয়েডের জন্য নির্দিষ্ট আসনগুলি অনুশীলন করে খুবই ভাল ফল পাচ্ছেন।

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে রোগ প্রতিরোধ এবং রোগ নিরাময় উভয় ক্ষেত্রেই ভুমিকা অনস্বীকার্য্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top